• ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক


Oct 28, 2022
06:55:50

সুন্দরবনে বাঘশুমারি খরচ সোয়া তিন কোটি টাকা

সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প-এর মাধ্যমে তিন কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়ছিল। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সেই ব্যয় কমিয়ে তিন কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দের অনুমোধন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে “ক্যামেরা ট্র্যাপিং” (ক্যামেরার ফাঁদ) পদ্ধতিতে বাঘশুমারির কাজ শুরু করা হবে “প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য ১৭ অক্টোবর বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাঘ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। সভায় কনসালট্যান্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা, ক্যামেরা সংগ্রহ, ম্যাপ তৈরি, ক্যামেরা স্থাপনের স্থান নির্ধারণের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “বনের গভীরে এমন সব জায়গায় ক্যামেরা স্থাপন করা হবে, যেখান দিয়ে বাঘ চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে। খুঁটিতে বাঘের আনুমানিক উচ্চতায় ক্যামেরা বসানো হবে। এসব ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাঘ বা কোনো প্রাণী চলাফেরা করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি উঠবে।” 

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাঘ বা কোনো প্রাণী চলাফেরা করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি উঠবে এই পদ্ধতিতে ২০১৩-২০১৫ সালে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে প্রথম বাঘ জরিপ করা হয়। তখন বাঘ পাওয়া গিয়েছিল ১০৬টি। দ্বিতীয়বার ২০১৭-২০১৮ জরিপ করে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১১৪টি “আশা করছি, এবার শুমারিতেও বাঘের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।”

খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে গোটা প্রকল্পের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, “সুন্দরবনের মধ্যে শিবসা, পশুর ও পাঙ্গাশিয়াসহ বড় নদীগুলোর কারণে বাঘ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বাঘের ইনব্রিডিং হচ্ছে। অন্তঃপ্রজননের কারণে, বাঘ নানাভাবে দুর্বল এবং রোগাক্রান্ত হচ্ছে। সুন্দরবনের একস্থান থেকে নিয়ে, অন্য স্থানে বাঘ স্থানান্তর করা গেলে প্রজননের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। বাঘের আবাসস্থল প্রায় প্রতিবছর আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের যে অংশে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি থাকে, সেসব জায়গায় দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ ও সুন্দরবনে আগুন লাগলে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানো যায়, সেজন্য আগুন নেভানোর যন্ত্রাংশ, পাইপ ও ড্রোন ক্রয় করা হবে। সুন্দরবনে ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৯ সালে আইলা ও ২০২১ সালে ইয়াসের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বনের সব এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বনের বাঘ ও বাঘের শিকারপ্রাণী আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে প্রবেশ করে। এসব প্রাণীর ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়ের জন্য সুন্দরবনে ১২টি মাটির কিল্লা স্থাপন করা হবে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে নানাভাবে অর্ধশত বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২২টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৬টি বাঘের মৃত্যু হয়। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ১১টি বাঘের চামড়া এবং বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধার করে বলে জানান।